উত্তরার সব কটি শুটিং হাউসই কমবেশি গমগম করছিল। ১৩ নম্বর সেক্টরে আপন ঘর–এ শুটিং করছিলেন মোশাররফ করিম। ১০ নম্বরে আফরান নিশো। তাঁর পাশেই ব্যস্ত অপূর্ব ও মেহ্জাবীন চৌধুরী। পুবাইলের শুটিংবাড়িগুলোতেও একই চিত্র। সেখানে ব্যস্ত জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরীরা। এগুলো সবই ঈদের নাটক। তারকা এবং শুটিংবাড়িগুলোর এই ব্যস্ততায় নাট্যাঙ্গনে ফিরেছে স্বস্তি। টেলিভিশন অনুষ্ঠান বিভাগ ও প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার জন্য চার শতাধিক নাটকের নির্মাণকাজ চলছে। অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা গত তিন ঈদ ঘরে বসেই কাটিয়েছেন। করোনায় একের পর এক বাতিল হয়েছে শিডিউল। কয়েকজন অভিনয়শিল্পী সতর্কতা মেনে শুটিং করেছেন, কিন্তু কাজের সেই প্রাণখোলা পরিবেশ আর ছিল না। এবারের ঈদের আগে সেই চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে, ফিরছে আগের অবস্থা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত শুটিং করবেন কেউ কেউ। সজল, শ্যামল মাওলা, জোভান, তৌসিফ, মনোজ প্রামাণিক, তাসনুভা তিশা, তানজিন তিশা, তাসনিয়া ফারিণ, কেয়া পায়েলসহ একাধিক শিল্পী এখন নিয়মিত উত্তরা টু পুবাইল আসা–যাওয়া করছেন। করোনা পরিস্থিতি ভালো থাকলে তাঁদের কারও ৪০টি, কারও ১৫টির অধিক নাটক ঈদে বিভিন্ন টেলিভিশন ও ইউটিউবে প্রচারিত হবে।
গত ১০ বছর প্রতি ঈদে মোশাররফ করিমের ৩০টির বেশি নাটক প্রচারিত হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু গত ঈদ। ২০টির মতো নাটকের শিডিউল দেওয়া ছিল। কিন্তু করোনায় একটি নাটকেও শুটিং হয়নি। গত মাসে ভারত থেকে ফিরেই ঈদ নাটকের শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই অভিনেতা বলেন, ‘ঈদের কাজগুলো নিয়ে দর্শকের আগ্রহ থাকে। করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদের কাজ করে স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। তাই একটু বুঝেসুঝে শিডিউল দিচ্ছি। এবার কাজে কিছুটা খুশি। পরিস্থিতি ভালো থাকলে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত শুটিং করতে হতে পারে।’
২০১৭ সালে অভাবনীয় জনপ্রিয়তা পায় বড় ছেলে। তার পর থেকে প্রতি ঈদে অপূর্ব–মেহ্জাবীন জুটিকে নিয়ে নাটক করতেন মিজানুর রহমান আরিয়ান। ব্যতিক্রম ছিল গত ঈদ। প্রস্তুতি থাকার পরও করোনার কারণে শুটিং করা সম্ভব হয়নি। গতকাল থেকে আবারও শুটিংয়ে ফিরেছেন এই জুটি
আরিয়ান বলেন, ‘এবার পাঁচটি নাটক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। পরিস্থিতি ভালো থাকলে কাজে কোনো ছাড় দিতে চাই না। সকল নিয়ম মেনে কাজ করছি।’ মিস্টার অ্যান্ড মিস চাপাবাজ আনলিমিটেডসহ একাধিক নাটকে তাঁদের দেখা যাবে। অভিনেত্রী মেহ্জাবীন চৌধুরী বলেন, ‘এবার গল্পের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি সবচেয়ে বেশি। এবার গল্পে পরিবর্তন পাবেন দর্শক। এমন হবে না যে ঘরেই সব কাজ শেষ। কোনো কম্প্রোমাইজ করছি না এবার।’
আগামী ঈদে বাংলাভিশনে ৪৭টি, আরটিভিতে ৪৭টি, এনটিভিতে ২৩টি নাটক প্রচারিত হতে পারে। নাটক প্রচার করে এ ধরনের যত চ্যানেল আছে, সব কটিই ঈদে নাটক প্রচার করবে। বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান তারেক আকন্দ বলেন, ‘আমাদের নাটকগুলোর শুটিং ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কিছু নাটকে আমরা চমক রাখছি। সেগুলোর শিগগিরই শুটিং শুরু হবে। নাটকে এবার গল্পকে প্রাধান্য দিচ্ছি।’
প্রতিদিন একাধিক ঈদ নাটকের প্রস্তাব পান জাহিদ হাসান। বেশির ভাগ গল্পই মনঃপূত হয় না। পুবাইলের শুটিংবাড়ি থেকে তিনি বলেন, ‘সিংহভাগই কমেডি গল্প। শুধু শুধু মানুষ হাসানোর গল্পে মুখ দেখাতে ভালো লাগে না।’ এর মধ্যে কিছু গল্পকে মন্দের ভালো মনে করে ঈদ নাটকের শুটিংয়ে ফিরেছেন এই অভিনেতা। জানালেন, এবার ১২টির মতো খণ্ড ও ধারাবাহিক নাটকে দেখা যাবে। জুলাইয়ে টানা শুটিং শুরু করবেন। পাশাপাশি তাঁকে পরিচালনায়ও দেখা যাবে।
গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে স্বপ্নিল শুটিং হাউসের মালিক ফোন ধরেই বললেন, ‘গত বছরটা আমাদের পুরোটাই লোকসানে গেছে। গত ঈদে কিছুটা কাজ হয়েছে। এবার আশা করছি, টানা ঈদ পর্যন্ত কাজ চলবে। আমরা হয়তো একটু হাসতে পারব।’ উত্তরা ও পুবাইলের ৪টি শুটিংবাড়িতে খবর নিয়ে জানা যায়, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শিডিউল খালি নেই।