“বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিনা আক্তার। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও ২৮ আগষ্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২১ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। আজ থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী এ উপলক্ষ্যে সাংবাদিকবৃন্দের মাধ্যমে উপজেলার সকল মৎস্য চাষী, মৎস্যজীবী, আড়ৎদার, মৎস্য ব্যবসায়ীসহ মৎস্য সেক্টরের সাথে জড়িত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুয়ায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩.৪১ লক্ষ মেট্রিক টন। আর মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪৩.৮৪ লক্ষ মেট্রিক টন। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৭ দশমিক ৫৪ লাখ মেস্রিক টন। ৩৫ বছরের ব্যবধানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৪ লাখ মেন্রিক টন। অর্থাৎ, এই সময়ের ব্যবধানে মোট মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সাড়ে পীচ গুণ। সরকারের বাস্তবমুখী কার্ধক্রমের ফলে বাংলাদেশ এখন মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের অধিক এ সেক্টরের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। মতবিনিময় সভায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, মৎস্যখাত বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম অগ্রাধিকারভুক্ত খাত। বৈশ্বিক মহামারী জনিত প্রতিকূল পরিবেশে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাশয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ বান্ধব ও উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর কার্যক্রম গ্রহণের ফলে দেশ আজ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত কয়েক দশকে দেশে চাষ করা মাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। শিং, মাগুর, পাবদার মতো আরও বিভিন্টপ্রজাতির দেশি মাছ হারিয়ে যেতে বসেছিল। গবেষণার মাধ্যমে এই জাতের মাছ এখন চাষ হচ্ছে। দেশে বিপুল পরিমাণ পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া ও রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীনের’উদ্তাবিত মাছের জাত এখন বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন শিক্ষিত তরুণেরা চাকরির দিকে না ঝুঁকে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো মাছ ও কৃষিকাজে সহজ শর্তে খণ দিয়েছে। এতে মাছের দিকে মানুষ ঝুঁকেছে। মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৩,১৭১ মেট্রিক টন, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। দেশের মোট কৃষি আয়ের ২৫.৭২ শতাংশ আসে মৎস্য থেকে। অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা ও ইলিশ প্রজনন সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৫ মে.টন। যা ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মে.টন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মৎস্যখাত ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ থেকে গুনগত মানসম্পন্ন হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে৷ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন, কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলামিন দেওয়ান আল আবেদী, কালিগঞ্জ উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক, কালীগঞ্জ উপজেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আহমদ আলী, কালীগঞ্জ উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল কবির, সাংবাদিক কাজী মনজুর হোসেন, সাংবাদিক মোঃ রায়হান মাহামুদ প্রমুখ।