ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি দপ্তরটি নিজের প্রতিষ্ঠিত অফিসে পরিণত করেছেন। চেয়ারম্যান তার নিজের ওই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন ও হিসাব রক্ষক অর্জুন কুমারকে জেলা পরিষদ অফিসে আলাদা রুমে বসিয়ে ভুয়া ও কল্পিত প্রকল্প বানিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছেন।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে জেলা পরিষদের সাতজন নির্বাচিত সদস্য যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে তার প্রতি অনাস্থা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোরাদিম মোস্তাকিম মনির। এ সময় পরিষদের হরিণাকুন্ডুর সদস্য আলাউদ্দীন, কালীগঞ্জের জসিম উদ্দীন সেলিম, মহেশপুরের লিটন মিয়া, কোটচাঁদপুরের রাজিবুল কবীর, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আনোয়ারা খাতুন ও অনিতা বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে প্যানেল চেয়ারম্যান বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই একই প্রকল্প বার বার দেখিয়ে টাকা লোপাট করছেন হারুন অর রশিদ। শহরের হামদহ মনুমেন্টের পাশে একক সিদ্ধান্তে অবৈধভাবে রাস্তার পাশে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ধোপাঘাটা সেতুর পূর্বপাশে মার্কেট নির্মাণ ও মাটি ভরাটের কথা বলে জেলা পরিষদের ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এডিপি এবং রাজস্ব থেকে দুস্থ নারীদের সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে ১৫-২০ লাখ টাকা ও গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের বাইসাইকেল কেনার নামে প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
প্যানেল চেয়ারম্যান মোরাদিম মোস্তাকিম মনির আরও বলেন, জেলা পরিষদের নামাজ ঘর, অফিস, ডাকবাংলো, ছাদ বাগান ও অফিস পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। চেয়ারম্যান তার নিজ প্রতিষ্ঠান সৃজনি প্রিন্টার্স ও তাজ ফিলিং স্টেশন ও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মালামাল ক্রয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিষদ অফিস চত্বরে ৮-১০ লাখ টাকার কাঠ নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে রাতের আঁধারে পাচার করেছেন তিনি। জানুয়ারি মাসে দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য ৬ হাজার পিচ কম্বল কেনা দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা পকেটে ঢুকিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে খাল ও পুকুর একক সিদ্ধান্তে ইজারা দিয়ে সরকারি আইন ভঙ্গ করেছেন চেয়ারম্যান হারুন। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো সদস্যের মতামত নেন না। বরং সদস্যদের সাদা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো রেজুলেশন তৈরি করে রাজস্ব তহবিল থেকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ এবং একই প্রকল্প বার বার দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন।
এদিকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের এই দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ জেলার চার জন সংসদ সদস্য যৌথ স্বাক্ষরে ৯ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেন।
সংসদ সদস্যরা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ নিজের খেয়াল খুশি মতো প্রকল্প গ্রহণ করেন। উপদেষ্টা হিসেবে সংসদ সদস্যদের মতামত নেন না। আগের চেয়ারম্যানের দেওয়া নিয়োগকৃত কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করছেন, যা অমানবিক। ঝিনাইদহ যশোর সড়কের কড়াই ও মেহগনি গাছ নামে বেনামে টেন্ডার করে নিজের নামে নিচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশিদ বলেন, আমার ওপর যেসব অভিযোগ আনছে এগুলো অসত্য এবং ভিত্তিহীন। আমি জেলা পরিষদের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরও হয়নি। এর মধ্যে দেড় মাস হজে ছিলাম। কয়েকজন সদস্য তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।