তুরস্কের তরুণ দলে প্রতিভার কমতি নেই। কিন্তু প্রতিভা কি ইতালিরও কম আছে নাকি! তারওপর রবার্তো মানচিনির অধীনে চিরায়ত ইতালিয়ান ঢংয়ের বাইরে এসে আধুনিক গতিশীল ফুটবলে দাপুটে দেখাচ্ছে ইতালিকে। এই ইউরোতে আসার আগেই টানা ২৭ ম্যাচ অপরাজিত দলটা, জিতেছে ইউরোর আগের টানা ৮ ম্যাচে।
ইউরোর প্রথম ম্যাচে আজ তুরস্কের বিপক্ষেও একই ইতালিকেই দেখা গেল। রোমের স্তাদিও অলিম্পিকে তুরস্ককে বিবশ করে রেখে ৩-০ গোলে জিতল ইতালি।
তিনটি গোলই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে, একটির সঙ্গে অন্যটির ব্যবধান ঠিক ১৩ মিনিট করে! ৫৩ মিনিটে প্রথম গোলটি আবার তুরস্কের ডিফেন্ডার দেমিরালের আত্মঘাতে। ৬৬ মিনিটে চিরো ইমোবিলে করেন ইতালির দ্বিতীয় গোল, ৭৯ মিনিটে ইতালির তৃতীয় গোলটি লরেঞ্জো ইনসিনিয়ের দারুণ বাঁকানো শটে।
ম্যাচে ইতালির গোলপোস্টে একটাও শট নিতে না পারা তুরস্ক যে প্রথমার্ধটা গোলশূন্য রেখে আশার রেণু ছড়িয়েছ, তাতেই তাদের খুশি হওয়ার কথা। গোলপোস্ট বাদ দিন, এর বাইরে মিলিয়েও হিসেবটা করলে ম্যাচে তুরস্ক শট নিতে পেরেছে মাত্র ৩টি। উল্টোদিকে ইতালির শট ২৪, এর ৮টি ছিল তুরস্কের গোলপোস্টে। বলের দখলেও দাপট ছিল ইতালিরই, ৬৪ শতাংশ।
রবার্তো মানচিনির অধীনে ইতালি যে আর আগের মতো নেই, সেটা বাছাইপর্ব কিংবা নেশনস লিগের ম্যাচগুলোতে বেশ ভালোই দেখিয়েছিল ইতালি। এবার আরও বড় মঞ্চে নিজেদের পরিবর্তনের স্বাক্ষর রাখল দলটা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তুরস্ককে ২৪ দলের মধ্যে অন্যতম রক্ষণ-শক্তিশালী দল ভাবা হচ্ছিল। দেমিরাল, সয়ুঞ্জু, চেলিক, কাবাকের সঙ্গে চালহানোলু-তুফানের দ্রুতগতির প্রতি-আক্রমণ, একক স্ট্রাইকার হিসেবে বুরাক ইলমাজের ফর্ম আশা দিচ্ছিল দলটাকে। ইতালির আগুনে ফর্মের সামনে সবকিছু উড়ে গেল এক ফুৎকারে।
প্রথমার্ধে ইতালির সামনে তুরস্ক জানপ্রাণ দিয়ে শুধু রক্ষণই করে গেল। পেছন থেকে খেলা গড়ে নেওয়ার বালাই নেই, ভালোভাবে নিজেদের আক্রমণ রচনা করার ইচ্ছে নেই, আট-নয়জন মিলে নিজেদের রক্ষণভাগে দাঁতে দাঁত চেপে ইনসিনিয়ে, স্পিনাৎসোলা, বারেল্লা, লোকাতেল্লি, ইম্মোবিলে, বেরার্দিদের একেকটা আক্রমণ হয় হেড করে নাহয় ব্লক করে আটকাতে থাকলো।
আটকাতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ডি-বক্সের মধ্যে বল হাতেও লাগলো তাঁদের। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই যেমন, লেফটব্যাক স্পিনাৎসোলার একটা শট হাতে লাগল তুরস্কের রাইটব্যাক জেকি চেলিকের। রেফারি পেনাল্টি দিলেন না।
এসব দেখেই কি না, ইতালি ভেবে নিল, যা করার নিজেদেরই করতে হবে। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়ে দিল দলটা। এতটাই বাড়াল, যে সেই আক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রক্ষণ করা সম্ভব হলো না তুরস্কের পক্ষে। ৫৩ মিনিটে ডিবক্সের ডানদিকে বিপজ্জনকভাবে ঢুকে গেলেন সাসসুয়োলোর উইঙ্গার দমিনিকো বেরার্দি। তাঁর ক্রস আটকাতে গিয়ে উলটো নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দিলেন দেমিরাল। ব্যস, তুরস্কের সব বাধা সেখানেই শেষ।
এরপর সময় যত গেছে, তুরস্কের ওপর তত ছড়ি ঘুরিয়েছে ইতালি। ৬৬ মিনিটে বারেল্লা-বেরার্দি হয়ে আবারও স্পিনাৎসোলার পায়ে বল। গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা এই লেফটব্যাকের শট আটকালেও বল আয়ত্ত্বে রাখতে পারেননি তুরস্কের গোলকিপার উরজান চাকির। সামনে থাকা চিরো ইম্মোবিলের তাই সেই বল জালে জড়াতে সমস্যাও হয়নি।
দুই গোল খাওয়ার পর তুরস্ক তখন নাবিকহীন জাহাজ। রক্ষণ থেকে বল বের করার জন্য লং কিক করলেন গোলকিপার চাকির। সেটা কোন সতীর্থের কাছে না গিয়ে গেল বেরার্দির কাছে। সেখান থেকে বারেল্লা হয়ে ইনসিনিয়ের কাছে যখন বল গেল, ততক্ষণে তুরস্কের ডিফেন্ডাররা দর্শকের ভূমিকা নিয়ে নিয়েছেন। দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে স্কোরলাইন ৩-০ করতে সমস্যা হয়নি নাপোলি উইঙ্গারের।
ইউরো মাত্র শুরু। কিন্তু ইতালি যেভাবে প্রথম ম্যাচেই সুর বেঁধে দিলো গোটা টুর্নামেন্টের, সে সুরে সব ফেবারিট গলা মেলাতে পারলে এটা নিশ্চিত, দুর্দান্ত এক টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে এটা।