নায়িকাদের বিয়ে ও সন্তানসম্ভবা, দুটোকেই যত দিন সম্ভব চেপে রাখা যায়—এত দিন পর্যন্ত এটাই ছিল বিনোদন দুনিয়ার রীতি। মনে করা হতো এসব খবর চাউর হলে নায়িকার ক্যারিয়ার শেষ। পশ্চিমে মান্ধাতা এসব রীতি অনেক আগেই পাল্টে গেছে, সেখানে বিয়ে, মাতৃত্ব—দুটোই এখন ঘটা করে উদ্যাপনের বিষয়। কিছুদিন হয় এই হাওয়া উপমহাদেশেও লাগতে শুরু করেছে। বেবি বাম্পের (প্রথম গর্ভাবস্থা) ছবি প্রকাশ না করলে এখন যেন পিছিয়ে পড়তে হয়। পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী নুসরাত জাহানও কি তাই করলেন? প্রকাশ করলেন বেবি বাম্পের ছবি!
শ্চিমবঙ্গের বালিগঞ্জের বাসায় সম্প্রতি অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় এবং তনুশ্রী চক্রবর্তীর সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন নুসরাত। একত্রে ছবিও তুলেছেন তিনজন। সেখানে দেখা গেছে, সাদা হাতকাটা লম্বা ঝুলের জামা পরেছেন নুসরাত, কানে মাকড়ি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখে-মুখে মাতৃত্বের আভা। তাঁর দুপাশে বন্ধু শ্রাবন্তী ও তনুশ্রী।
২০১৯ সালের ১৯ জুন বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যবসায়ী নিখিল জৈনকে বিয়ে করেছিলেন নুসরাত জাহান। তুরস্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন গুটিকয় অতিথি। ফিরে এসে কলকাতায় একটি বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিলেন নুসরাত-নিখিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন একঝাঁক তারকা।
সেই বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায়, নভেম্বরে হঠাৎ একসঙ্গে অনেক ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন নুসরাত, হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল তাঁকে। ধারণা করা হয়, ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন তিনি। গুঞ্জন ছড়ায়, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন নুসরাত। তবে কখনোই সেটা স্বীকার করেনি তাঁর পরিবার।
প্রায় দুই বছর পর সম্প্রতি এই অভিনেত্রী দাবি করেন, বিয়ে নয়, লিভ টুগেদার করছিলেন তাঁরা। তুরস্কের বিবাহ আইন অনুসারে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল অবৈধ। এ ছাড়া হিন্দু-মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে বিয়ে করা উচিত, যা তাঁদের ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এ কারণে তাঁদের বিয়েটা আইনগতভাবে বৈধ না। ৯ জুন এক বিবৃতিতে নুসরাত এসব জানিয়েছেন।
নিখিল জানিয়েছেন, নুসরাতের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেদিন জানলাম, নুসরাত আমার সঙ্গে নয়, অন্য কারও সঙ্গে থাকতে চায়, সেদিনই মামলা করেছি।’ নুসরাতের মা হওয়ার ঘটনায় নিখিল বলেন, ‘সন্তানের বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি। নুসরাত প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর মামলা করিনি।’ জবাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নুসরাত শুধু লিখেছিলেন, ‘আদালতে দেখা হবে।’
১৯৯০ সালের ৮ জানুয়ারি কলকাতার এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে নুসরাত জাহানের জন্ম। আওয়ার লেডি কুইন অব দ্য মিশনস স্কুল এবং ভবানীপুর কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি। ২০১০ সালে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জিতে মডেলিং শুরু করেন। ২০১১ সালে সিনেমায় অভিষেক। তাঁর প্রথম ছবি ‘শত্রু’, যেখানে জিতের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। দ্বিতীয় ছবি দেবের সঙ্গে ‘খোকা ৪২০’, তৃতীয় ছবি অঙ্কুশ হাজরার সঙ্গে ‘খিলাড়ি’। এ ছবিতে দুটি আইটেম গানে নেচে নজর কাড়েন তিনি। তারপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে বসিরহাটের সাংসদ হন তিনি।