ইতিহাস রাঙানো ফুটবলারদের জন্মদিন যেন কাছেপিঠেই আসে!
লিওনেল মেসি আজ কাটছেন ৩৪তম জন্মদিনের কেক। গতকাল জন্মদিন পালন করলেন জিনেদিন জিদান। সর্বকালের সেরাদের তালিকা করলে নিশ্চিতভাবেই দুজন থাকবেন সে তালিকায়।
দুজনের জন্মদিন কাছাকাছি পড়ে যাওয়াতেই ফুটবল সমর্থকদের অনেকের মনে পড়তে পারে, ৫ ফেব্রুয়ারি একইদিনে জন্মদিনের উৎসব পালন করেন সময়ের ফুটবলের সেরাদের দুজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও নেইমার। তা এভাবে জোড়ায় জোড়ায় জন্মদিন থেকেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করে দিলে কেমন হয়?
একই দিনে জন্মানো খেলোয়াড়দের নিয়ে একাদশ গড়া তো আর সম্ভব নয়। অত পরিচিত কিংবা তারকা খেলোয়াড় পাওয়া যাবে না। সে কারণে একটু এদিক-সেদিক করে যদি একাদশ গঠন করা হয়?
একদিকে মেসি-জিদানের জন্মমাস জুনে জন্ম নেওয়া খেলোয়াড়, অন্যদিকে রোনালদো-নেইমারের ফেব্রুয়ারি? কেমন হবে একাদশ, কে জিতবেন কাল্পনিক সে লড়াইয়ে?
প্রথমে ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেওয়া কিংবদন্তি ও পরিচিত খেলোয়াড়দের নাম দেখে নেওয়া যাক। গোলকিপারের তালিকায় এখানে পাওয়া যাচ্ছে কিংবদন্তি ইতালিয়ান গোলকিপার দিনো জফ, ইতালিয়ান দলের বর্তমান গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা, আর্জেন্টিনার সাবেক গোলকিপার সের্হিও রোমেরো ও পর্তুগালের বর্তমান গোলকিপার রুই পাত্রিসিওকে।
ডিফেন্ডারের তালিকায়ও কী তারকার অভাব নাকি! কিংবদন্তি ইতালিয়ান ডিফেন্ডার চেজারে মালদিনি আছেন, বার্সেলোনায় খেলা সাবেক মেক্সিকান ডিফেন্ডার রাফায়েল মার্কেজ আছেন, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও উরুগুয়ের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার দিয়েগো গদিন আছেন।
পর্তুগাল জাতীয় দলের ডিফেন্ডার পেপে, বার্সেলোনার বর্তমান ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে, বায়ার্ন মিউনিখ ও জার্মানি দলের রাইটব্যাক (ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডেও খেলেন) ইয়োশুয়া কিমিখ, ইন্টার মিলানের ডিফেন্ডার মিলান স্ক্রিনিয়ার, এসি মিলানের লেফটব্যাক লুকাস হার্নান্দেজ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক রাইটব্যাক গ্যারি নেভিলও আছেন।
মিডফিল্ডার খুঁজছেন? কাকে ছেড়ে কাকে নেবেন? কিংবদন্তিদের মধ্যে আছেন ব্রাজিলের সক্রেটিস, ফ্রান্সের ক্লদ ম্যাকেলেলে, রোমানিয়ার গিওর্গি হ্যাগি। জার্মানির সাবেক মিডফিল্ডার স্টিভ ম্যাকমানামান, ব্রাজিলের সাবেক জুনিনিওও আছেন। বর্তমান সময়ের তারকাদের মধ্যে আছেন রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো, ডেনমার্কের হয়ে ইউরোতে অপ্রত্যাশিত কারণে বুকে কাঁপন ধরানো ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনও আছেন।
আর ফরোয়ার্ড? রোনালদো আর নেইমার তো আছেনই, এর বাইরে পাবেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, ইতালির রবার্তো বাজ্জো, বার্সেলোনার কিংবদন্তি রিস্টো স্টইচকভ, ব্রাজিলের কিংবদন্তি বেবেতো। হালের তারকাদের মধ্যে আছেন আর্জেন্টিনার আনহেল দি মারিয়া, কার্লোস তেভেজ, মাউরো ইকার্দি, উরুগুয়ের এদিনসন কাভানি, কলম্বিয়ার রাদামেল ফালকাও…। ব্রাজিলের সাবেক স্ট্রাইকার আদ্রিয়ানোও আছেন।
এঁদের মধ্য থেকে একাদশ গড়া সহজ কাজ নয় মোটেও। কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন! তবু একটা একাদশ দাঁড় করানোর চেষ্টা থেকে গোলপোস্টে রাখা হয়েছে দিনো জফকে।
তাঁর সামনে ৩-৪-৩ ছকে রক্ষণে রাখা হলো পেপে, দিয়েগো গদিন ও চেজারে মালদিনিকে। মিডফিল্ডের মাঝে ক্লদ ম্যাকেলেলে ও কাসেমিরো, দুই পাশে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে থাকছেন সক্রেটিস ও গিওর্গি হ্যাগি। আর তিন ফরোয়ার্ডের মধ্যে নেইমার আর রোনালদোর সামনে রাখা হলো গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে একটা সময় রাইট উইংয়ে খেলতেন, এই স্মৃতির ফায়দা নিয়ে রোনালদোকে রাখা হলো আক্রমণের ডানদিকে। নেইমারকে বাঁদিকে।
দলের কোচ কে হবেন? ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেওয়া কোচদের মধ্যে বার্সেলোনার সাবেক কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে, ইংল্যান্ডের সাবেক কোচ সভেন গোরান এরিকসেন আর এই ইউরো শেষে জার্মানি দল থেকে বিদায় নিতে যাওয়া ইওয়াখিম ল্যুভ আছেন। জার্মানিকে ২০১৪ বিশ্বকাপ জেতানো কোচ ল্যুভকে বেছে নিতে খুব বেশি ভাবতে হয় না।
এ তো গেল রোনালদো-নেইমার একাদশ। মেসি-জিদান একাদশ গড়ার আগে জুন মাসে জন্ম নেওয়া ফুটবলারদের দেখে নেওয়া যাক।
গোলকিপারদের তালিকায় প্রথমেই আসবে জার্মান কিংবদন্তি অলিভার কান আর ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপার ফাবিয়ান বার্থেজের নাম। উরুগুয়ের গোলকিপার ফার্নান্দো মুসলেরাও আছেন।
ডিফেন্ডারদের তালিকায় কিংবদন্তিদের অভাব নেই। ব্রাজিলের কিংবদন্তি রাইটব্যাক কাফু, ইতালির কিংবদন্তি ও চেজারে মালদিনির ছেলে পাওলো মালদিনি আছেন। সত্তর দশকে ইংল্যান্ড-ইউরোপ মাতানো লিভারপুলের কিংবদন্তি সেন্টারব্যাক অ্যালান হানসেনও আছেন, যাঁকে তর্কসাপেক্ষে লিভারপুলের ইতিহাসের সেরা সেন্টারব্যাক বলা হয়। এর বাইরে হালের ডিফেন্ডার খুঁজলে নাপোলির কালিদু কুলিবালি, বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাওয়া দাভিদ আলাবা, রিয়ালেরই ফারলাঁ মেন্দিও আছেন।
মাঝমাঠে জুনে জন্ম নেওয়া তারকার ছড়াছড়ি। জিদান তো আছেনই। মেসির সঙ্গে আজ একই দিনে জন্মদিন ভাগাভাগি করছেন আর্জেন্টিনারই আরও অনেক কিছু করতে না পারার আক্ষেপ হয়ে থাকা হুয়ান রোমান রিকেলমে। কিংবদন্তিদের তালিকায় এখানে আছেন ফ্রান্সের প্যাট্রিক ভিয়েরা ও মিশেল প্লাতিনি, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ—দুই ক্লাবেই আলো ছড়ানো মাইকেল লাউড্রপ, আর্জেন্টিনার ফার্নান্দো রেদোন্দো ও হাভিয়ের মাচেরানো, ইংল্যান্ড ও চেলসির কিংবদন্তি ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, নেদারল্যান্ডসের ওয়েসলি স্নাইডার, ব্রাজিলের সাবেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ফিলিপে মেলো।
সময়ের তারকাদের মধ্যে আছেন ম্যানচেস্টার সিটি ও বেলজিয়ামের কেভিন ডি ব্রুইনা, বার্সেলোনা ও ব্রাজিলের ফিলিপে কুতিনিও, ইংল্যান্ড ও লিভারপুলের জর্ডান হেন্ডারসন।
ফরোয়ার্ডদের মধ্যে মেসি ছাড়া আছেন স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেস। আছেন ১৯৫৪ বিশ্বকাপের কিংবদন্তি হাঙ্গেরি দল আর ক্লাবে বার্সেলোনার হয়ে আলো ছড়ানো লাজলো কুবালাও। সময়ের তারকাদের মধ্যে লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ, মেসিরই বন্ধু সের্হিও আগুয়েরো, আর্সেনালের পিয়ের-এমেরিক অবামেয়াং আছেন।
এই দলের কোচ বেছে নেওয়াও অনেক কঠিন কাজ হতে যাচ্ছে। জুনে জন্ম নেওয়া কোচদের তালিকায় আছেন লিভারপুলের ইয়ুর্গেন ক্লপ, এই মৌসুমে আবার রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাওয়া কার্লো আনচেলত্তি ও ইংল্যান্ডের সাবেক ইতালিয়ান কোচ ফাবিও কাপেলো। ক্লপ আর আনচেলত্তির মধ্যে তুমুল লড়াই, সেখানে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার কীর্তির কারণেই ক্লপকে টপকে দায়িত্বটা পাচ্ছেন আনচেলত্তি।
গোলকিপার হিসেবে এই দলে রাখা হচ্ছে কানকে। দলের মাঝমাঠে তারকার ছড়াছড়ির কারণে দল সাজানো হচ্ছে ৩-৫-২ ছকে। সেখানে রক্ষণের তিনে থাকছেন কাফু, অ্যালান হানসেন ও পাওলো মালদিনি।
মাঝমাঠে প্যাট্রিক ভিয়েরার সঙ্গে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। তাঁর সামনের তিনের মাঝে জিনেদিন জিদান, তাঁর দুই পাশে মিশেল প্লাতিনি ও কেভিন ডি ব্রুইনা। রিকেলমে, কুতিনিও, রেদোন্দো, মাচেরানো, লাউড্রপ, স্নাইডারদের বেঞ্চেই না হয় রাখা হলো।
আর সামনে আক্রমণে মেসির সঙ্গে রাখা হলো রাউল গঞ্জালেসকে। সে জন্য অবশ্য লাজলো কুবালার সঙ্গে দারুণ লড়াই হয়েছে রাউলের।
পাঠক, দল পছন্দ হয়েছে? কী মনে হয়, কে জিতবে এই দুই দলের কাল্পনিক লড়াইয়ে? নিচের পোল-এ অংশ নিয়ে জানিয়ে দিন আপনার মতামত। দলে কোনো বদল দেখতে চাইলে, নিজের পছন্দের একাদশ জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে।