সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগই বাংলাদেশকে আজ এই অবস্থানে এগিয়ে নিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক দারিদ্র বিমোচন দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে ‘শোভন কাজ ও সামাজিক সুরক্ষা: সবার জন্য সমান মর্যাদা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) যৌথভাবে এই আলোচনা সভা আয়োজন করে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সরকার চেয়েছে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেরা কিছু করুক। সেই সুযোগ না দিলে কাজটা সরকারকেই করতে হতো। সরকারের হাতে এত অর্থ কোথায়? তখন সরকার আপনাদের ওপর আরও কর আরোপ করত। এই করের টাকা দিয়ে সামাজিক সুরক্ষার নামে সরকার কিছু সুযোগ-সুবিধা করে দিত। আমার বিশ্বাস, শুধু সরকারি ব্যবস্থায় আজকের অবস্থান তৈরি হতো না।
ড. আতিউর রহমান বলেন, আমরা আজকে হয়তো অনেক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কথা বলছি। কিন্তু, একটা সময় ছিল আমাদের, যেখানে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই সময়মতো খেতে পারত না। একটির বেশি পোশাক পরতে পারতো না। শীতের সময় শীতবস্ত্র ছিল না। পায়ে কোনো জুতা ছিল না৷ বেশিরভাগই কুড়েঘরে থাকতো। সেই জায়গাগুলো তো বদলেছে। সেই বদলটা একা কেউ পারেনি৷ সবাই মিলেই আমরা করেছি। যেখানে রাষ্ট্র, বাজার, সামাজিক সংগঠন সবারই অংশগ্রহণ ছিল। এই কথাগুলো মেনে নেওয়া ভালো। তথ্য যা-ই বলুক না কেন, এগুলো আমরা খালি চোখে দেখতে পাই। তবে নিঃসন্দেহে আরও অনেক বেশি পরিবর্তনের সুযোগ আছে। আরও বড় ধরনের জীবনমান পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আমাদের আছে। কিন্তু যতটুকু আমরা পেরেছি, সেটি স্বীকার করে আরও কী করা যায়, সেটি নিয়ে আমরা আলাপ করতে পারি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। সেই সময়ে অন্য রাষ্ট্র থেকে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ হচ্ছে। তখনও মানুষ ঐক্যবদ্ধ ছিল, সক্রিয় ছিল উন্নয়ন। সবচেয়ে বড় পুঁজি ছিল আমাদের সামাজিক উন্নয়ন। ওই সময়ে আমরা আমাদের মনের দারিদ্র্য দূরীকরণে সবচেয়ে ভালো করেছি। সুতরাং, দারিদ্র্য দূর করতে হলে মানুষের ঐক্যবদ্ধ ও সামাজিক পুঁজিটাই সবচেয়ে বড় পুঁজি। আমরা নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছি। কিন্তু, এখনো মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে, তখনই সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে মনের দারিদ্র্য কিংবা বাস্তব দারিদ্র্য দূর করবার জন্য।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, গত ৫২ বছরে যতটুকু সাফল্যই আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেখানে যেখানেই মানুষ এক হবার চেষ্টা করেছে, সেখানে কিছু না কিছু সাফল্য তারা এনেছে। এ কারণেই বাংলাদেশ এগিয়েছে। যেকোনো সরকারই বলতে পারেন, আমরা ওই পরিবেশটা তৈরি করতে পেরেছি, যে কারণে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে। এর কৃতিত্ব সরকারকে দিতে হবে৷ সরকার বেসরকারি কাজ করতে নাও দিতে পারত। অনেক দেশেই দেয় না।
তিনি আরও বলেন, আরও একটি পিলার আছে। সেটি হলো বাজার। যেটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বাজারকেও বাদ দিয়ে শুধু সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে এ অবস্থায় আনতে পারত না। বাজারের সরবরাহ চেইন থেকে আমরা সবাই সুবিধা নিচ্ছি। সুতরাং, পিলার কিন্তু ৩টি। রাষ্ট্র, বাজার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- এগুলো নিয়েই আমরা এগোচ্ছি। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আমরা সামনে কী করব সেই আলাপ করতে পারি। আমরা আশা করছি যে, এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই বজায় থাকুক।
এডাবের কোষাধ্যক্ষ মাসুদা ফারুক রত্নার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি শারমীন রিনভী।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডাবের কর্মসূচি পরিচালক কাউসার আলম কনক।