কখনো সেনাবাহিনীর বড় অফিসার, কখনো র্যাব, কখনো বা বাবা-মা বেঁচে নেই এমন পরিচয়ে একের পর এক মেয়েকে বিয়ে করে অনেক পরিবারকে পথে বসিয়েছে জীবন চৌধুরী ওরফে টিটন। বিয়ের পর কিছু দিন থাকে শ্বশুরবাড়িতে। এরপর বিভিন্ন কাজের কথা বলে অথবা জমি রেজিষ্ট্রী খরচ বাবদ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। এরপর এক সময় কৌশলে সটকে পড়তেন। আবার একই কায়দায় অন্য কোনো এলাকায় গিয়ে বিয়ে করে, টাকা আদায় করে। অনেকে জামাই সরকারি চাকুরী করে ভেবে মটর সাইকেল, মোবাইল ফোন, দামি ঘড়ি, জামা-প্যান্ট কিনে দেয়।
এভাবেই নিজের নাম-পরিচয় গোপন করে একের পর এক বিয়ে আর প্রতারণার জাল ফেলেন টিটন যে কত নারীর সর্বনাশ করেছেন তার ইয়াত্তা নেই। টিটন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ধান্যহাড়ীয়া গ্রামে সিরাজুল ইসলাম ঢালীর ছেলে।
সর্বশেষ গত রবিবার ২৭শে জুন মহেশপুর উপজেলার বাথানগাছি গ্রামের লোকজন গণপুটুনি দিয়ে বেধে রাখে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ঘটনার পর মেয়ের মা বাদী হয়ে মহেশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। মেয়ে মা বলে যে, প্রতারক টিটন বলে বিয়ের ব্যাপারে সেনা বাহিনী থেকে তার এখনো বিবাহের অনুমতি পায়নি । সেকারণে আমাদের বিবাহের বিষয়টি গোপন রাখতে বলে। তার হতে পিস্তল, হ্যান্ডকাপ ও একটি ওয়াল্লেস দেখে আমারা তাকে মনে প্রানে বিশ্বাস করি।
এই অবস্থায় গত ২১/০৪/২০২১ইং তারিখে চাকুরী সংক্রান্ত কারনে গোপনীয় ভাবে রাতের অন্ধকারে একজন কাজী সহ আমাদের বাড়িতে আমার মেয়েকে বিবাহ করতে আসে এবং একটি ভূয়া নিকাহনামায় স্বাক্ষর করে আমার মেয়েকে বিবাহ করে। বিয়ে পর সে আমাদের কে জানায় বিয়ের বিষয়টি তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানতে পেরেছে, এখন চাকরি বাঁচাতে ৭,০০,০০০(সাত লক্ষ) টাকার প্রয়োজন।
অতি দ্রুত টাকা ম্যানেজ করতে না পারলে আমার হয়তবা চাকুরীটি হারাতে হবে বলে জানায়। তখন আমার মেয়ের জামাইয়ের চাকুরী বাঁচাতে গরু,গহনা ,ব্রিক্রি করে লোন নিয়ে নিজের কাছে জমানো কিছু অর্থ সহ মোট ৪,০৯,০০০(চার লক্ষ নয় হাজার) আকাশ মাহমুদ শাকিল ওরফে মোঃ টিটনের হাতে তুলে দিয়। পরে জানতে পারি যে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের আরো অনেক অভিযোগ আছে । বহুবার ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে। পুলিশের হাত থেকে বের হয়ে আবারও সেই একই কৌশলে বিবাহ করে মেয়েদের জীবন নষ্ট করে। সে সরকারী চাকুরী করেন এটা প্রমাণ করতে সাথে রাখেন র্যাব-সেনাবাহিন ইউনিফর্ম, পিস্তল ও ওয়াকিটকি। যা দিয়ে খুব সহজেই মেয়ে এবং মেয়ের মা বাবার মনে বশে আসে।
উল্লেখ্য গত ২০১৯ সালে ৯ ই জুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লাউদিয়া গ্রামের এক বাড়ি বিয়ের আসর থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশ এর নিকট থেকে সেনাবাহিনীর নামে একটি ভুয়া পরিচয় পত্র উদ্ধার করে। এই পরিচয় পত্র এর নাম শ্রাবণ উল্লেখ আছে। ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানার কর্মরত এস আই সাখাওয়াত হোসেন জানান ৯ ই জুন রোজ রবিবার দিবাগত রাত ৩ টার দিয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে এক ব্যক্তি সেনাবাহিনীর সেকেন্ট লেফটেন্যান্ট পরিচয় দিয়ে রতনহাট গ্রামে একটি মেয়েকে বিবাহ করছে। তার আচার আচারনে স্থানীয় জনসাধারণের মনে সন্দেহ হলে ঝিনাইদহ থানা পুলিশ কে খবর দেয়। এই খবরে ঝিনাইদহ সদর থানার এস আই সাখাওয়াত হোসেন সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে বিয়ের আসর থেকে আটক করে। এই সময়ে তার নিকট থেকে সেনা বাহিনীর ব্যবহার কৃত সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট নামের একটি পরিচয় পত্র উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনার আগে ২০১৯ সালে ২৬ শে মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামে একই পরিচয়ে একটি বিয়ে করেছে। জানা যায় যে পরদিন মেয়েকে নিয়ে ঢাকা যেতে চাই সন্দেহ হলে মেয়ের পরিবার দেয়নি সে তখন হতে মেয়ের সাথে বাজে ব্যবহার শুরু করে। বেশকিছু টাকা স্বর্ণের আংটি নিয়ে গেছে। পরে যে নম্বর দিয়েছিল সেই নাম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উল্লেখিত ঘটনাছাড়া ইতিপূর্বে তার নামে মহেশপুর থানায় ৩২৪, ৩২৬.৩০৭, ৫০৬, ১১৪, ৩৪১, ৩২৩, ৩৭৯, ৫০৬, সহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০১১ একটি ও ২০১২ সালে দুইটি মোট ৩ টি মামলা আছে। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম এলাকায় জামাত নেতা হিসাবে পরিচিত।
এই প্রসঙ্গে মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাথে মোবাইলে কথা হোলে সে জানায় লোক জন গন পিটানি দিয়ে বেঁধে রেখেছিল খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার নামে অন্য মামলা থাকলেও সে মামলায় তার জামিন আছে। তবে এই প্রসঙ্গে মামলা হোলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।