দীর্ঘ সাত মাস পর চট্টগ্রাম কারাগার থেকে কক্সবাজার কারাগারে আনার ৪ দিনের মাথায় জামিন আবেদন করেছন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় কারান্তরীন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
রবিবার (১৩ জুন) দুপুরের দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে তার জামিন আবেদন করা হয়। আগামী ২৭ জুন জামিন আবেদনের শুনানি দিন ধার্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
ওসি প্রদীপের পক্ষে আইনজীবী মহিউদ্দিনের করা জামিন আবেদনের শুনানি করতে রবিবার কক্সবাজার আদালতে এসেছিলেন অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্তের নেতৃত্বে একটি আইনজীবী প্যানেল।
পিপি ফরিদুল আলম বলেন, ‘ওসি প্রদীপের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। আগামী ২৭ জুন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।’ এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) চট্টগ্রাম কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে কক্সবাজার কারাগারে আনা হয় ওসি প্রদীপকে।
গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাখেদ খান। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়েছে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীকে প্রধান করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাবকে। এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
পরবর্তীতে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের করা মামলার ৩ জন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ ছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেফতার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।
মামলায় গ্রেফতার ১৪ আসামিকে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উক্ত মামলায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। মামলার অপর অভিযুক্ত ওসি প্রদীপের অন্যতম সহযোগী কনস্টেবল সাগর দেব এখনো পলাতক রয়েছেন।
অপরদিকে, সিনহা হত্যার মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ দাবি করে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন একটি মামলা দায়ের করেন। ওই দিন আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
কিন্তু শুনানির ওই নির্ধারিত দিনে সিনহা হত্যার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন ১০ নভেম্বর।
অন্যদিকে মামলার শুনানির নির্ধারিত দিনে (১০ নভেম্বর) আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন আবারো পিছিয়ে যায়।
ওই দিন (১০ নভেম্বর) আদালত মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর দুদকের একটি দুর্নীতি মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির হতে হচ্ছিল ওসি প্রদীপকে। সে কারণে তাকে ২০২০ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। সে মামলার নানা কার্যক্রম শেষে দীর্ঘ সাত মাস পর আবারও ওসি প্রদীপকে কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।