আমনের এই ভরা মৌসুমে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) বাফার যশোর গুদামে সারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। টাকা জমা দিয়েও ইউরিয়া সার পাচ্ছেন না মাগুরা, যশোর ও নড়াইল জেলার দুই শতাধিক ডিলার। প্রতিদিন তিন জেলার ডিলাররা ইউরিয়া সার উঠাতে এসে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিছু ডিলার বরাদ্দের সামান্য পরিমাণ সার পাচ্ছেন। সারের এ সঙ্কটের কারণে মাথায় হাত উঠেছে কৃষকদের। অলস সময় পার করছেন গুদামে কর্মরত শ্রমিকরা। টানা বর্ষণে পঁচে গেছে শত শত একর আমন বীজতলা। যশোর শহরের খোলাডাঙ্গায় অবস্থিত সারের বাফার গুদাম। যেখানে দেশি-বিদেশি কারখানায় উৎপাদনকৃত ইউরিয়া সার যশোর, নড়াইল ও মাগুরা জেলার কৃষকদের জন্যে মজুদ রাখা হয়। এখান থেকে ডিলাররা সরাসরি সার উত্তোলনের পর খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে পৌঁছায়। কিন্তু যশোরের এই বাফার গুদামটি চলতি আমন মৌসুমে প্রায় খালি পড়ে আছে। গুদামের ইনচার্জ আক্তারুল ইসলাম বলেন, গুদামে সার মজুদ রাখার জন্য ৪টি ঘর রয়েছে। যার ধারণ ক্ষমতা চার হাজার টন। অথচ কোনো কোনো সময় দশ হাজার টন মজুদ থাকে। প্রতি চালানে তিন হাজার টন সার আসে। অধিকাংশ আসে সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে। এই গুদাম থেকে জেলার মোট ২২১ জন ডিলার সার উঠিয়ে থাকেন। এখন পর্যন্ত চারটি ঘরের মধ্যে মাত্র একটিতে ৪শ’ টন সার মজুদ আছে। সিলেট থেকে ৩০ টন সার এসেছে। যা এখনো গুদামে ঢোকানোর প্রক্রিয়ায় আছে। এ বিষয়ে কথা হয় একাধিক ডিলারের সাথে। তারা জানান, ব্যাংকে টাকা জমাদানের রশিদ দেয়ার পর একদিনের মাথায় খুব সহজে সার উত্তোলন করা যেতো। কিন্তু এবার ১০ দিনের অধিক সময় পার হলেও সার পাওয়া যাচ্ছে না। তারা জানান, একেক অঞ্চলের ডিলারদের বরাদ্দের পরিমাণ ভিন্ন। একেক জন ডিলার সার উঠানোর জন্যে সর্বনিম্ন ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা জমা দেয়ার পর দূর-দূরান্ত থেকে আসা ডিলাররা প্রতিদিন সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরনা দিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। হাতে গোনা দুই-একজন সার পেলেও বরাদ্দের চার ভাগের এক ভাগও হবে না। তারা বলেন, গুদামের চারটি ঘরের মধ্যে তিন ঘর তালাবদ্ধ। একটি ঘরে সামান্য পরিমাণে সার মজুদ আছে। সার উত্তোলনের জন্য এসে প্রতিদিন বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক পর্যায়ে সারের দাম বেড়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, প্রায় এক মাসের অধিক সারের কোনো বড় চালান আসেনি। তাদের আয়-উপার্জন ও অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাকে সার উঠানো এবং নামানোর পরিমাণের ভিত্তিতে তারা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এদিকে অতি প্রয়োজনীয় ইউরিয়া সার সংকটের প্রভাব পড়েছে মাঠ পর্যায়েও। যশোর বাফার গুদামের ইনচার্জ আক্তারুল ইসলাম আরো বলেন, ‘লকডাউনের পাশাপাশি বৈরি আবহাওয়ার কারণে পণ্য পরিবহনে অসুবিধা হচ্ছে। সে কারণে সাময়িক এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বড় একটি চালান আসার অপেক্ষায় আছি। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।