পরীমনির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে নিজেই প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এ নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোল। বদলী করা হয়েছে ওই তদন্ত কর্মকর্তাকে। তথ্য মতে মামলা তদন্তের অংশ হিসেবে পরীমনিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন শিথিল। এ কারণে তার সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমনির। এরপর দুজনের মধ্যে শুরু হয় যোগাযোগ। নিয়মিত পরীমনির বাসায় যাতায়াত শুরু করেন গোলাম সাকলায়েন শিথিল। মাঝে-মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বের হতেন দু’জনে। গোলাম সাকলায়েন শিথিল তার বাসায় পরীমনিকে নিয়ে প্রবেশ করছে (সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র) সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, সবশেষ পরীমনি ডিবির কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন শিথিলের রাজারবাগের মধুমতি ভবনের বাসায় গিয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করেন। ৪ আগস্ট রাতে গ্রেফতারের পর পরীমনি অকপটে স্বীকার করেছেন সবকিছু। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, পরীমনিকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ফাঁস হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত রাজারবাগের মধুমতি বাসভবনের কেয়ারটেকার শামীমকে সিসিটিভি ফুটেজের ডিভিআরসহ পুলিশ সদরদফতরে ডেকে পাঠান। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরীমনির বক্তব্যের সত্যতা পান।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা সিসিটিভির ফুটেজের বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, ১ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে পরীমনির সাদা রংয়ের একটি হ্যারিয়ার গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫৯৬৫৩) গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওই আবাসিক ভবনের সামনে থামে। প্রথম সেই গাড়ি থেকে লাল রংয়ের টি-শার্ট পরিহিত গোলাম সাকলায়েন শিথিল নামেন। এরপর সাদা রংয়ের একটি স্লিপিং গাউন পরিহিত অবস্থায় নামেন হালের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। এসময় তার কোলে ছিল বাদামি রংয়ের কুকুর, যাকে পরীমনি ‘কুটু’ বলে ডাকেন। এরপর রাত দেড়টায় ওই ভবনের সামনে আবার আসে পরীমনির গাড়ি। শিথিলের পরিচয় দিয়ে সেখানে ঢোকেন চালক। গাড়ি পার্কিং করে তিনি মোবাইলে উচ্চশব্দে গান ছেড়ে শুনছিলেন। এতে সন্দেহ হয় দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীর। কারণ পুলিশের নিজস্ব কোনো চালক এতো রাতে আবাসিক এলাকার মধ্যে এভাবে গান শোনার কথা নয়। তিনি তখন পরীমনির ওই চালকের কাছে তার পরিচয় ফের জানতে চান। চালক তখন ওই নিরাপত্তাকর্মীকে জানান, পরীমনির সঙ্গে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিয়ে হয়েছে বলে তিনি জানেন। ৪ আগস্ট রাতে পরীমনির সঙ্গে হেফাজতে নেয়া গাড়িচালক মো. নাজির হোসেনও জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ওই দিন সকাল ৭টার দিকে পরীমনির ফোন পেয়ে তিনি বনানীর বাসায় যান। সেই বাসা থেকে একসঙ্গে গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাকলায়েন ও পরীমনি হ্যারিয়ার গাড়িতে ওঠেন। এরপর তিনি তাদের ওই পুলিশ কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে নামিয়ে চলে যান। আবার রাতে ফোন পেয়ে সেই ভবনের সামনে যান। তখন তাকে নিরাপত্তাকর্মীরা নানা প্রশ্ন করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি জানিয়েছেন, নিয়মিত কথা বলতে বলতে ডিবি কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর তারা নিয়মিত গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হতেন। গোলাম সাকলায়েন শিথিল তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সর্বশেষ তিনি গত ১ আগস্ট গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান। পরীমনির সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপু জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ঈদুল আজহার পর তিনি পরীমনির বাসায় গিয়ে জানতে পারেন গোলাম সাকলায়েন শিথিল এসে তার বাসায় তিন দিন ছিলেন। তিনি শিথিলের সঙ্গে পরীমনির প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতেন। পরীমনিই তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে শিথিল নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবি করেন। কিন্তু পরে শিথিল বিবাহিত জানতে পারলে পরীমনি ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশে তোলপাড় হলেও শুক্রবার (৬ আগস্ট) রাত পর্যন্ত গোলাম সাকলায়েন শিথিলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন শিথিল বলেন, ‘পরীমনির সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে। তবে তা প্রেমের সম্পর্ক নয় এবং আমরা বিয়েও করিনি।’ গত ১ আগস্ট পরীমনিকে তার মধুমতির বাসভবনে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন ডিবির এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি যদি অনৈতিক কাজ হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে তার (গোলাম সাকলায়েন শিথিল) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুত্র জাগো নিউজ।