ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার মেসার্স মালিতা রাইচ মিলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ধান চাল মাড়াইয়ের কোন কার্যক্রম নেই। অথচ ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর এই বন্ধ মিল থেকে ৯.৯৯০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ দেখানো হয়েছে। মেসার্স জনতা রাইচ মিলটিও আর চলে না। কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ভাঙ্গাচোরা চাতাল চত্বরে ঘাস জন্মে গেছে। ময়লা আবর্জনা জমে বোঝা যাচ্ছে মাসের পর মাস রাইচ মিলটি বন্ধ। এই মিলের নামেও গত বছর ৯.৯৯০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ দেখানো হয়েছে। হরিণাকুন্ডুতে বন্ধ বিভিন্ন রাইস মিল সচল দেখিয়ে সরকারি গুদামে জালিয়াতির মাধ্যমে অহরহ চাল বিক্রি করা হলেও দেখার কেউ নেই। একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে চলে হরিণাকুন্ডুর খাদ্য বিভাগ। হরিণাকুন্ডু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলার ৩৪টি রাইচ মিল থেকে প্রায় সাড়ে তিন’শ মেট্রিক টন চাল কেনা দেখানো হয়েছে। অনেক মিল মালিক নিজেরাই জানেন না যে তাদের নামে চাল বরাদ্দ হয়েছে। হরিণাকুন্ডু চাল কল মালিক সমিতির যিনি সভাপতি সেই আব্দুল আজিজ মালিতার মালিতা রাইচ মিলটিই অচল। অনেক রাইচ মিলের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। হরিণাকুন্ডু শহরের লালন শাহ কলেজের আশে পাশে কেবল ১৬টি মিল সচল পাওয়া গেছে। চাল সরবরাহ করা তালিকার ৩ নং ক্রমিকের মন্ডল রাইচ মিল, ৪ নাম্বারে মুক্তা রাইচ মিল, ৬ নাম্বারে আরেফিন রাইচ মিল, ৩৩ নাম্বারে মোমিন রাইচ মিল, ৯ নাম্বারে আন্দলিয়া রাইচ মিল, ২৯ নাম্বারে আবু তালেব রাইচ মিল ও ২৬ নাম্বারে আব্দুল লতিফ রাইচ মিলসহ বেশ কিছু রাইচ মিলের কার্যক্রম বন্ধ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে হরিণাকুন্ডু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ওসিএলএসডির সহায়তায় প্রতিবছর এভাবে সরকারের চাল ক্রয় কর্মসূচির আওতায় অচল রাইচ মিল সচল দেখিয়ে চাল সরবরাহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার ও প্রকৃত মিল মালিকরা। চাল কেরার নীতিমালাও মানা হচ্ছে না। সিন্ডিকেট যে ভাবে চাই সেভাবেই ধান ও চাল কেনা হয় বলে কথিত আছে। স্থানীয় কয়েকজন মিল মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হরিণাকুন্ডু খাদ্য অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্ধ ও পরিত্যক্ত মিলকে সচল দেখিয়ে বছরের পর বছর এই বানিজ্য চালিয়ে আসছেন। এই কাজে সহায়তা করছেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা কিছু দালাল চক্র। বন্ধ, পরিত্যক্ত ও উৎপাদনে নেই এমন মিলকে সচল দেখিয়ে তাদের নামে সরবরাহের বরাদ্দ দিয়ে বছরের পর বছর এ কারবার চালিয়ে আসছেন তারা। সোমবার সরেজমিন হরিণাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো এলাকায় শ্রী সঞ্জয় কুমার রায়ের জনতা রাইচ মিলটি দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। সেখানে কোন কায়ক্রম নেই। একই ভাবে ঠান্ডু মিয়ার মেসার্স বিসমিল্লাহ রাইচ মিলের স্থানে বসানো হয়েছে বরফ কল। এসব মিলের লাইসেন্স ব্যবহার করে সরকারি গুদামে বিক্রি করা হচ্ছে চাল। একটি সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ওই সব বন্ধ মিলের লাইসেন্সের অনুকূলে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মিলের নামে ৯ টনের বেশি পর্যন্ত চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। মিল মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে প্রতি বছর সরকারি গোডাউনে চাল সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন নগদ অর্থ। হরিণাকুন্ডুর খান রাইচ মিলের মালিক দাবীদার বৈঠাপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার জানান, কিছু রাইচ মিলের সবই আছে কেবল সচল নেই। সারা বছর লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ মৌসুম আসলে কেবল মিলাররা কিছু লাভ করেন। তিনি বলেন, লালন শাহ কলেজ এলাকায় ১৬টি মিল চালু আছে। আবার কোন কোন মিলের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অনেক রাইচ মিলের জায়গায় নতুন নতুন ভবন শোভা পাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুন্ডু খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখর আহম্মেদ জানান, তিনি নতুন এসেছেন। আগে থেকে যে ভাবে রাইচ মিলের তালিকা ছিল সেভাবেই চাল কেনা হয়েছে। আগামীতে বন্ধ ও অচল মিল বাদ দেওয়া হবে। বক্তব্য জানতে হরিণাকুন্ডু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইশরাত জাহানের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিস সুলতানা জানান, গত বছর আমরা ২০ থেকে ২২টি মিলের তালিকা খাদ্য বিভাগকে সরবরাহ করেছিলাম, জানা মতে ৩৪টি মিলে নাম তো ছিল না। তিনি বলেন, বন্ধ আর অচল মিল থেকে কোন চাল কেনা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।